শিক্ষা আজ যেন পণ্যের রূপ ধারণ করেছে

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ০১ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৪৪:৫৫ দুপুর

নিঃসন্দেহে শিক্ষাই হলো একটি জাতির মেরুদন্ড অর্থাৎ

সুশিক্ষা কোন জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতির প্রধান উপায়।

অন্যদিকে শিক্ষকরা হলেন জাতির মেরুদন্ড। দেশ ও

জাতির মেধা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি সাধনে শিক্ষকদের ভূমিকা

অনস্বীকার্য ও অপরিসীম। সেজন্য শিক্ষকদেরকে একজন

ব্যক্তি, একটি সমাজ তথা দেশের কারিগর মনে করা হয়।

শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক চিন্তা-চেতনা ও

নৈতিক-মূল্যবোধ গঠনে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষা-

প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরু দায়িত্ব রয়েছে। তাই বলতে গেলে

একজন শিক্ষক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি শিক্ষার্থীর মেধা

- মনন ও সৃজনশীলতার সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশে সচেষ্ট

থাকেন, যিনি শিক্ষার্থীর চারিত্রিক গঠনেও নিজেকে

বিলিয়ে দেন। কেননা অপরের মনের অভাব পূর্ণ করার

উদ্দেশেই শিক্ষকের হস্তে জন্মায় শিক্ষা।

কিন্তু বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে জাতিকে নিরক্ষরতার

করাল গ্রাস থেকে উদ্ধারের জন্য অনেক সরকারী-

বেসরকারী এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন হাজার হাজার

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থাকলেও আমাদের জাতীয় অবক্ষয় আজ

তীব্র আকার ধারণ করেছে যেন। দেশে অনেক বাণিজ্যিক

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আজ ব্যাঙের ছাতার মতো বিদ্যমান

শুধু মুনাফা অর্জনের আশায়। অথচ জাতিকে নিরক্ষরমুক্ত

করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষাকে মৌলিক

অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দে।

শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে

রাষ্ট্র ক্ষমতার লোকেরাও ভেবেছেন। মূলত এদেশের

শিক্ষাব্যবস্থা যেন ভুট্টা চাষ প্রকল্পের মতো। এক সরকার

এসে ভুট্টার বাম্পার ফলন করে কৃষকদের বেশ উদ্ধুদ্ধ করলো।

কিন্তু আর এক সরকার এসে বললো, না এ মাটিতে কলা চাষ

করলে ভাল লাভবান হওয়া যাবে! এভাবে

শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত, সামঞ্জস্যপূর্ণ,

অগ্রগতিশীল, বিবেচনা প্রসূত এবং আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত

মানবিকধারার কাঠামো কখনোই গড়ে ওঠেনি। প্রশ্ন

জাগে, এর সবচেয়ে বড় সংকটটি কোথায়? একই সমাজে

একটি জাতির প্রজন্মটাই আজ গড়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন

ভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে যার ফলে রাষ্ট্র, সমাজ-

সংস্কৃতি-দর্শন ও দেশ প্রেমের মৌলিক চেতনা সবার

মধ্যে সমভাবে বিদ্যমান না। সাধারণ শিক্ষা- মাদ্রাসা

শিক্ষা-ইংলিশ মিডিয়ামের পাশাপাশি আরো কত

অসংখ্য শিক্ষাধারা প্রচলিত তার কোন হিসেবে নেই। তাই শিক্ষা আজ যেন পণ্যের রূপ ধারণ করেছে। ছলে-বলে-

কৌশলে, নানা লোভনীয় প্রচারে এক শ্রেণীর নির্লজ্জ

মাফিয়া শিক্ষা নিয়ে ওত পেতে বসে আছে বাণিজ্যের

পসরায়। শিক্ষার পদ্ধতিগত কারণেই হোক আর

বাণিজ্যিকীকরণের কারণেই হোক, ক্লাসরুমের বাইরে

আজ টাকা দিয়ে শিক্ষাকে কিনতে হচ্ছে।

জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য অনেক শিক্ষকরাই আজ

প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় অনেক

শিক্ষক এই পেশাকে ব্রত হিসেবে নিলেও তাদের

অনেকেই আজ ব্যক্তি স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য ব্যস্ত

হয়ে পড়েন। যার ফলশ্র“তিতে অনেক ক্ষেত্রে আজ তারা এ

দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

অনেক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ আছেন।

যারা মূল কর্মস্থলের দায়িত্বের চেয়ে টিউশনি বা

কোচিং সেন্টারে বেশি সময় দিয়ে থাকেন। কেননা

টাকা অর্জন আজ তাদের কাছে শুধু পেশা নয় নেশায়ও

পরিণত হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয়

ক্লাশে বুঝতে না পারলে তাকে আজ আলাদাভাবে

শিক্ষকদের কাছে বুঝতে হয়। কি অদ্ভুত ব্যাপার! তাহলে

কি শিক্ষকগণ বিষয়টি পুরোপুরি বুঝাতে সময় দেননা? না

কি বুঝানোর যথেষ্ট সময় নেই? প্রস্তুতি নেবার কোন

তাড়া অনুভব করেন কি? এসব সম্পর্কে স্কুল বা কলেজ

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

সব শিক্ষককে আবার একই মানদন্ডে বিচার করা যুক্তিসঙ্গত

নয়। কেননা এখনো অনেক ভাল ও আদর্শ শিক্ষক আছেন যারা

নীতিবান থেকে পুষ্পের ন্যায় কোমলমতি

শিক্ষার্থীদের অন্তরাত্মাকে বিকশিত করতে সর্বাত্মক

চেষ্টা করেন; তাদের জন্যই আজও সমাজে শিক্ষার আলো

জ্বলছে এবং আগামীতেও জ্বলবে। সে সব শিক্ষকদের

সাধুবাদ জানাই।

বিষয়: বিবিধ

৮৮৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

333003
০১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:৪৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভাল শিক্ষক আছে বলেই এখন ও শিক্ষাটা টিকে আছে। অনেক সুন্দর পোস্ট। আপনাকে ধন্যবাদ।
383669
৩০ জুলাই ২০১৭ সকাল ০৯:২৩
Ruman লিখেছেন : কুশিক্ষার কারনে আমরা অনেক পিছিয়ে পরছি।
অনেক সুন্দর লিখেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File